আমরা প্রতিদিন নিঃশ্বাস নিচ্ছি, জীবন যাপন করছি—এটি মহান আল্লাহর এক অনন্য দান। আমাদের চারপাশে অনেক পরিচিত মুখ অল্প বয়সেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে, কিন্তু আমরা এখনো বেঁচে আছি। এই জীবন এক মহান আমানত, যার প্রতিটি মুহূর্ত অমূল্য। কেননা আমাদের সবার জন্য এক অবধারিত সত্য অপেক্ষা করছে—মৃত্যু।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন:
“كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ”
“প্রতিটি প্রাণকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।” (সূরা আলে ইমরান: ১৮৫)
যেহেতু মৃত্যু অনিবার্য, তাই আমাদের জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং তাঁর বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। একাজে প্রয়োজন বিশুদ্ধ ঈমান, সঠিক আমল এবং খাঁটি আকিদা।
আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেছেন:
“إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ”
“নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য জীবনব্যবস্থা হলো ইসলাম।” (সূরা আলে ইমরান: ১৯)
ইসলাম কেবল কিছু ইবাদতের সমষ্টি নয়—এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। এটি মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে নির্দেশনা প্রদান করে। কিন্তু মানুষ নিজের সীমিত জ্ঞান দিয়ে বিভিন্ন মতবাদ তৈরি করেছে—যেমন গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ইত্যাদি। এসব তন্ত্র আল্লাহর সার্বভৌমত্ব অস্বীকার করে, মানুষের বানানো আইনের আধিপত্য কায়েম করে। এটি ঈমানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং এক ধরনের শিরক।
ইসলামের ভিত্তি হচ্ছে তাওহীদ—একমাত্র আল্লাহর ইবাদত ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস। এর বিপরীত হলো শিরক—যা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে শরীক করা।
আল্লাহ বলেন:
“إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ…”
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শিরক করাকে ক্ষমা করেন না। এ ছাড়া অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন।” (সূরা নিসা: ৪৮)
যখন কোনো পদ্ধতিতে মানুষের মতামতকে আল্লাহর আইন থেকে ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়া হয়—তখন তা শিরকের শামিল হয়। গণতন্ত্র এই শ্রেণির একটি পদ্ধতি, যেখানে হালাল-হারামের সংজ্ঞা নির্ধারণ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ, আল্লাহ নয়।
রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন ইসলামের দাওয়াত দেন, মক্কার কাফিররা তাঁকে থামানোর জন্য তিনটি প্রস্তাব দিয়েছিল:
১. তাঁকে মক্কার সবচেয়ে ধনী বানানো,
২. আরবের সবচেয়ে সুন্দরী নারীর সঙ্গে বিবাহ দেওয়া,
৩. তাঁকে নেতা বানানো।
কিন্তু রাসূল ﷺ দ্বীনের প্রশ্নে কোনো আপোষ করেননি। বরং তিনি বলেন,
“যদি তারা এক হাতে সূর্য ও আরেক হাতে চাঁদও এনে দেয়, তবু আমি আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াত থেকে সরে আসব না।”
আল্লাহ বলেন:
“وَدُّوا لَوْ تُدْهِنُ فَيُدْهِنُونَ”
“তারা চায় তুমি আপোষ করো, তাহলেই তারা আপোষ করবে।” (সূরা কালাম: ৯)
গণতন্ত্র একটি মানব রচিত পদ্ধতি যেখানে মানুষের মতামতকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে ধরা হয়। এতে হালাল ও হারাম নির্ধারিত হয় সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে—আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী নয়।
আল্লাহ বলেন:
“أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ…”
“তারা কি তবে জাহেলিয়াতের শাসনব্যবস্থা কামনা করে? দৃঢ় বিশ্বাসীদের জন্য আল্লাহর চেয়ে উত্তম বিধানদাতা আর কে?” (সূরা মায়িদা: ৫০)
গণতন্ত্রের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠার চিন্তা একটি বিভ্রান্তিকর ধারণা। কুফরি পদ্ধতির মাধ্যমে ইসলামের বিজয় সম্ভব নয়।
ইসলাম কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে—এই পথ আল্লাহ তাঁর রাসূল ﷺ-এর মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়েছেন। কিয়ামত পর্যন্ত সেই নববী তরিকাই একমাত্র অনুসরণীয়। কোরআন ও সুন্নাহর বাইরে নতুন কোনো পদ্ধতি আবিষ্কার করা বিদ‘আত এবং ভ্রষ্টতা।
আল্লাহ বলেন:
“مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ… وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ”
“মুহাম্মদ তোমাদের কোনো পুরুষের পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী।” (সূরা আহযাব: ৪০)
ইসলাম একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবনব্যবস্থা। মানবজাতির যাবতীয় সমস্যার সমাধান এতে রয়েছে।
আল্লাহ বলেন:
“وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِّكُلِّ شَيْءٍ”
“আমি তোমার প্রতি কিতাব নাজিল করেছি, যাতে রয়েছে সব কিছুর বিস্তারিত ব্যাখ্যা।” (সূরা নাহল: ৮৯)
🔹 ১. ওহীর দরজা বন্ধ—নতুন পদ্ধতির অনুসন্ধান কেন?
নবী ﷺ গণতন্ত্রের মতো কাফির পদ্ধতির সাথে আপোষ করেননি।
➤ যারা গণতন্ত্র দিয়ে ইসলাম কায়েম করতে চায়, তারা কি রাসূলের তরিকা পরিপন্থী পথে হাঁটছে না?
🔹 ২. গণতন্ত্র মানুষের তৈরি পদ্ধতি—ইসলাম আল্লাহর বিধান
গণতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতকে চূড়ান্ত ধরা হয়, যা কোরআনের বিপরীত।
➤ তাহলে কিভাবে কেউ এই কুফরি পদ্ধতিকে ইসলামী শাসনের মাধ্যম ভাবতে পারে?
🔹 ৩. গণতন্ত্রে কুফরি ও শিরকি আইন পাশ হয়
অনেক ইসলামপন্থী দল গণতান্ত্রিক সংসদে অংশগ্রহণ করে—যেখানে আল্লাহর বিধান পরিত্যাগ করে মানুষের তৈরি আইন পাশ হয়।
➤ একজন প্রকৃত মুমিন কি এমন জায়গায় থাকতে পারে, যেখানে আল্লাহর হুকুমকে অস্বীকার করা হয়?
আল্লাহর সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে, রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর দেখানো পথ অনুসরণ করেই ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব। কুফরি গণতন্ত্রের মাধ্যমে ইসলাম কায়েমের চিন্তা বাস্তবতা নয়—এটি আত্মপ্রতারণা। আমাদের উচিত একমাত্র আল্লাহর নির্দেশিত পথেই অটল থাকা এবং সেই আলোতেই জীবন পরিচালনা করা।
মন্তব্য করুন