প্রতিটি নারী চায় ভালোবাসা, যত্ন ও গুরুত্ব—এটা স্বভাবগত। কিন্তু সবসময় সে যতটা পাওয়ার কথা, ততটা পায় না। অনেক সময় দেখা যায়, স্ত্রী মনে করেন তার স্বামী তাকে অবহেলা করছেন, ভালোবাসছেন না, সময় দিচ্ছেন না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, অনেক স্বামী তাদের পরিবারকে রক্ষা ও সুখী রাখার জন্য নিজের সীমার চেয়েও বেশি পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, যেটা বাইরে থেকে বোঝা যায় না।
একজন স্বামী প্রতিদিন বাইরে অজস্র মানসিক চাপ, দায়িত্ব, অপমান, আর্থিক অনিশ্চয়তা, ব্যবসার ওঠানামা, অফিসের টেনশন সবকিছু নিয়ে যুদ্ধ করেন—এবং সেই যুদ্ধের কাহিনি খুব কম ক্ষেত্রেই ঘরের মানুষ জানতে পারে। কারণ তিনি প্রকাশ করেন না, যেন তার প্রিয়জনরা চিন্তিত না হয়।
পরিবারের সদস্যরা প্রায়ই ভাবে, “সে গুরুত্ব দিচ্ছে না”, “ভালোবাসে না”, “অবহেলা করছে”। অথচ সে তার সাধ্যের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এই বোঝার অভাব অনেক ভুল বোঝাবুঝির জন্ম দেয়।
কুরআনে আল্লাহ বলেন:
“নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, সম্পদের, জান-মালের ও ফল-ফসলের ক্ষতির মাধ্যমে; আর ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।”
—সূরা আল-বাকারা, ২:১৫৫
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
“যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, রমযানের রোযা রাখে, নিজের সতীত্ব রক্ষা করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে—তাকে বলা হবে, ‘তুমি জান্নাতের যে দরজা দিয়ে চাও, প্রবেশ করো।'”
—মুসনাদ আহমদ, হাদীস ১৬৬৪
হযরত আছিয়া (আঃ)—ফিরআউনের স্ত্রী। স্বামীর সীমাহীন অত্যাচারের পরেও আল্লাহর প্রতি তার বিশ্বাস অটুট ছিল। আল্লাহ কুরআনে তার দৃষ্টান্ত দিয়েছেন।
“হে আমার রব! আমার জন্য তোমার কাছে জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করে দাও এবং আমাকে ফিরআউন ও তার কর্ম থেকে রক্ষা করো…”
—সূরা আত-তাহরিম, ৬৬:১১
হযরত খাদিজা (রাঃ)—রাসূল ﷺ এর প্রথম স্ত্রী। রাসূলের দাওয়াতি জীবনের প্রতিটি কষ্টে তিনি ছায়ার মতো পাশে ছিলেন, সাহস দিয়েছেন, ধৈর্য ধরেছেন।
এই দুনিয়া হলো ক্ষণস্থায়ী। কষ্ট হবে, বোঝা যাবে না—কিন্তু আল্লাহ কারো কোনো আমল অপচয় করেন না। নারীদের উচিত ধৈর্য ধরার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করা। কারণ,
“নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদেরকে তাদের প্রতিদান পরিপূর্ণরূপে দেওয়া হবে, কোন হিসাব ছাড়াই।”
—সূরা আজ-জুমার, ৩৯:১০
একজন স্বামী যেমন বাহিরের কঠিন বাস্তবতার সাথে লড়াই করছেন, তেমনি একজন স্ত্রীর উচিত ঘরকে শান্তির জায়গা বানানো। দুজনেই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করলে তবেই সম্পর্ক থাকবে শান্তিপূর্ণ। স্ত্রীদের উচিত ধৈর্য ও সহানুভূতির সঙ্গে স্বামীর অব্যক্ত কষ্টগুলো বুঝে পাশে থাকা।
এই দুনিয়ায় যতটা কম প্রত্যাশা থাকবে, আখিরাতে আল্লাহর দয়া ততটাই বেশি হবে। কারণ মানুষ নয়, আল্লাহই হলো আমাদের আশ্রয়, শান্তি ও প্রতিদান দানকারী।
মন্তব্য করুন